IQNA

হযরত আলীর (আ) কাব্য গ্রন্থ দীওয়ান আমীরিল মু'মিনীন আলী ইবনে আবী তালিব (আ) থেকে প্রথম ৭ পংক্তির তরজমা 

20:09 - October 11, 2022
সংবাদ: 3472626
তেহরান (ইকনা): সঠিক পিতৃপরিচয় শুদ্ধ ও বৈধ জন্মের ( জন্ম শুদ্ধি ) জন্য অবিচ্ছেদ্য ও অত্যাবশ্যক । সন্তান বৈধ ও হালালযাদা হওয়ার বিষয়টি পিতার ( পিতৃপরিচয় ) মাধ্যমে নির্ধারিত হয় । শুধু মাতৃ পরিচয় যথেষ্ট নয় । পিতৃ পরিচয় খুবই জরুরী ও অপরিহার্য। মা যত বড় উচ্চ কুলীন বংশেরই হোক না কেন সন্তান যদি সঠিক পিতৃ পরিচয়হীন হয় তাহলে সে শুদ্ধ বৈধ বংশ পরিচয় হীন হবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে কেবল সন্তানের জন্য মাতৃ পরিচয়ই যথেষ্ট বিবেচিত হচ্ছে। আর এতে করে জারজেরা ( যারা অবৈধ হারামজাদা তারা ) পারিবারিক সামাজিক মর্যাদা পেয়ে যাচ্ছে এবং বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ যৌন সম্পর্ক যা ধর্ম , নীতি নৈতিকতা , স্বভাব চরিত্র, শালীনতা ও বুদ্ধিবৃত্তির দৃষ্টিতে অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য তা বৈধতা পাচ্ছে বা দেওয়া হচ্ছে। আর এমন হলে সমাজ অতি অল্প সময়ের মধ্যে হয় পুরোপুরি বা এর বিরাট উল্লেখযোগ্য অংশ হারামজাদা ও জারজে পরিণত হবে এবং জন্মগত বিশুদ্ধতা লোপ পাবে।
 
হযরত আলীর (আ) কাব্য গ্রন্থ দীওয়ান আমীরিল মু'মিনীন আলী ইবনে আবী তালিব (আ) থেকে প্রথম ৭ পংক্তির তরজমা নীচে তুলে ধরা হল:
١. اَلنَّاسُ مِنْ جِهَةِ الْتِّمْثَالِ أَكْفَاءٌ
সকল মানুষ ( মানব জাতি ) দেহ অবয়ব ( আকার আকৃতি ) ও চেহারা-সূরতের দিক থেকে সমান ( সদৃশ )
أَبُوْهُمْ آدَمُ وَ الْأُمُّ حَوَّاءٌ
কারণ , তাদের সবার আদি পিতা আদম এবং আদি মাতা হাওয়া 
(( তাই, বর্ণবাদ ও জাতিগত বৈষম্য একদম অর্থহীন । একমাত্র
তাকওয়া ( আত্মসংযম ) ও সচ্চরিত্র ব্যতীত কোনো জাতিগত বর্ণগত শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রধান্য নেই । না সাদার ওপর কালোর আধিপত্য ও প্রভুত্ব আছে , না কালোর ওপর সাদার । ধর্ম , সহজাত মানব‌প্রকৃতি , বুদ্ধিবৃত্তি , নীতি নৈতিকতার আলোকে বর্ণ - বৈষম্যবাদ ঘৃণ্য ও প্রত্যাখ্যাত । অথচ তথাকথিত সভ্যতার দাবিদার পাশ্চাত্য এখনও বর্ণ বৈষম্য ও সংকীর্ণতার অর্গল থেকে মুক্ত হতে পারে নি । যদিও তারা নিজেদেরকে লিবারেল ( উদার / উদারতাবাদী ) বলে দাবি ও জাহির করে । ))
٢. وَ إِنًَمَا أُمَّهَاتُ النَّاسِ أَوْعِيَاءٌ
মায়েরা ( সন্তান ধারণ ও জন্মদানের) সংরক্ষিত আঁধার বা পাত্র স্বরূপ
مُسْتَوْدَعَاتٌ وَ لِلْأَحْسَابِ آبَاءٌ
আর পিতারাই শুধু বংশপরিচিতির জন্য* ( যথেষ্ট ) 
* সঠিক পিতৃপরিচয় শুদ্ধ ও বৈধ জন্মের ( জন্ম শুদ্ধি ) জন্য অবিচ্ছেদ্য ও অত্যাবশ্যক । সন্তান বৈধ ও হালালযাদা হওয়ার বিষয়টি পিতার ( পিতৃপরিচয় ) মাধ্যমে নির্ধারিত হয় । শুধু মাতৃ পরিচয় যথেষ্ট নয় । পিতৃ পরিচয় খুবই জরুরী ও অপরিহার্য । মা যত বড় উচ্চ কুলীন বংশেরই হোক না কেন সন্তান যদি সঠিক পিতৃ পরিচয়হীন হয় তাহলে সে শুদ্ধ বৈধ বংশ পরিচয় হীন হবে । আর বৈধ শুদ্ধ বংশ পরিচয় বিহীন ব্যক্তি জারজ ( বাস্টার্ড ও হারামযাদা ) । বস্তুবাদী বস্তাপচা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে কেবল সন্তানের জন্য মাতৃ পরিচয়ই যথেষ্ট বিবেচিত হচ্ছে। আর এতে করে জারজেরা ( যারা অবৈধ হারামজাদা তারা ) পারিবারিক সামাজিক মর্যাদা পেয়ে যাচ্ছে এবং বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ যৌন সম্পর্ক যা ধর্ম , নীতি নৈতিকতা , স্বভাব চরিত্র, শালীনতা ও বুদ্ধিবৃত্তির দৃষ্টিতে অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য তা বৈধতা পাচ্ছে বা দেওয়া হচ্ছে। আর এমন হলে সমাজ অতি অল্প সময়ের মধ্যে হয় পুরোপুরি বা এর বিরাট উল্লেখযোগ্য অংশ হারামজাদা ও জারজে পরিণত হবে এবং জন্মগত বিশুদ্ধতা লোপ পাবে। হালালযাদা - হারামযাদা (  বৈধ অবৈধ সন্তান ) সব একাকার হয়ে যাবে । স্বামী স্ত্রীর মাধ্যমেই পরিবার । লিভ টুগেদারে জীবন সঙ্গী নরনারীর মাধ্যমে বৈধ সিদ্ধ ( শরয়ী : শরিয়ত সম্মত ) পরিবার গঠিত হয় না । আর লিভ টুগেদারের মাধ্যমে জন্ম গ্রহণ কারী সন্তান বৈধ হালালযাদা নয় বরং হারামযাদা। আজ পাশ্চাত্যে লিভ টুগেদার ডালভাত । অবস্থা এতটাই ভয়াবহ ও সংগীন যে নিউজিল্যান্ডের নারী প্রধানমন্ত্রী লিভ টুগেদার করে সন্তান জন্ম দিয়েছে । নি: সন্দেহে তার এ সন্তান অবৈধ জারজ বাস্টার্ড হারামজাদা।
ইসলাম ধর্ম এ ধরনের জীবনযাপনের বৈধতা স্বীকার করে না যদিও অনেক মুসলিম দেশের সেক্যুলার সরকার লিভ টুগেদারের মতো অবৈধ জীবন যাপনের বৈধতা দিয়েছে বা এ ধরণের জীবন যাপনকে দেখেও না দেখার ভান ও উপেক্ষা করে এবং মোটেও বাধা দেয় না। সরকার বা রাষ্ট্র কর্তৃক লিভ টুগেদারের স্বীকৃতি আসলে যিনা ও ব্যভিচারের এক ধরনের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক স্বীকৃতি স্বরূপ । পাশ্চাত্যে পরিবারের সংজ্ঞায় লিভ টুগেদারও সন্নিবেশিত হয়েছে। পাশ্চাত্যের দৃষ্টিতে স্বামী স্ত্রী নিয়েই কেবল সংসার ও পরিবার নয় বরং জীবন সঙ্গী নর-নারী অথবা জীবন সঙ্গী সমকামীদের ( নারী-নারী বা পুরুষ - পুরুষ ) নিয়েও সংসার ও পরিবার গঠিত হতে পারে ! আর এটা স্বীকৃতি না দিলে পাশ্চাত্যের দৃষ্টিতে  ( এবং পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত জাতিসংঘের দৃষ্টিতে ) মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়ে গেল । যে দেশ এটার স্বীকৃতি দেয় না সে দেশ মানবাধিকার লঙ্ঘন কারী বলে গণ্য হবে পাশ্চাত্য ও তার নিয়ন্ত্রিত জাতিসংঘের দৃষ্টিতে । আর বৈধ বৈবাহিক সূত্রেই কেবল স্বামী স্ত্রী
হওয়া যায় যাদের মাধ্যমেই গঠিত হয় পরিবার। আর এই স্বামী স্ত্রী সন্তানের অধিকারী হলেই তখন তারা বৈধ ( শরয়ী ) পিতা মাতা হয়ে যায়। বস্তুবাদী  জড় বাদী , জড়তা ও জরাগ্রস্ত বিকৃত নব্যপৌত্তলিক পোষ্ট মডার্ন পাশ্চাত্যের নারীবাদ ( ফেমিনিজম) ও সেক্যুলারিজমের (ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ আসলে পাশ্চাত্যে ধর্মশত্রুতাবাদ ) চোটপাট ও দাপটে এ সব হাবিজাবি রাবিশ অখাদ্য কুখাদ্য আজ বিশ্ববাসীকে গোগ্রাসে গিলতে বাধ্য করা হচ্ছে !!
 
٣. فَإِنْ يَّكُنْ لَّهُمْ مِنْ أَصْلِهِمْ شَرَفٌ
বংশমূল নিয়ে যদি গর্ব করার মতো কোনো মর্যাদা থেকে থাকে তাদের ( মানবজাতি)
يُفَاخِرُوْنَ بِهٖ فَالطِّيْنُ وَ الْمَاءُ
তাহলে জলকাদা হচ্ছে মানব জাতির গর্বের বিষয় [ মাটি ও পানি গোটা মানবজাতির উৎস্য মূল বা আস্ল্ )। আর এই জলকাদা নিয়েই তাহলে মানবজাতিকে গর্ব করতে হবে । ]
٤. وَ إِنْ أَتَيْتَ بِفَخْرٍ مِنْ ذَوِيْ نَسَبٍ
যদি তুমি বংশকৌলিন্যের গর্ব কর
فَإِنَّ نِسْبَتَنَا جُوْدٌ وَ عَلْيَاءٌ
তাহলে আমাদের বংশমর্য্যাদা( বংশ কৌলিন্য ) হচ্ছে দানশীলতা ও মহানুভবতায় 
٥. لَا فَضْلَ إِلَّا لِأَهْلِ الْعِلْمِ إِنَّهُمْ 
একমাত্র জ্ঞানীগণ ব্যতীত নেই কারো কোনো মর্য্যাদা ও ফযীলত ( শ্রেষ্ঠত্ব )
عَلَى الهُدَىٰ لِمَنِ اسْتَهْدَىٰ أَدِلَّاءُ 
কারণ , তারাই ( জ্ঞানীরা ) সুপথ নির্দেশক তাদের জন্য যারা সুপথ ( হিদায়ত ) পেতে চায় ।
٦. قِيْمَةُ الْمَرْءِ مَا قَدْ يُحْسِنُهُ 
মানুষের মূল্য মান যতটুকু সে জেনেছে ঠিক ততটুকু ( তার জ্ঞানের পরিমাণ দিয়েই তার ফযীলত , সম্মান ও মর্যাদা নিরূপিত হয় ) ।
وَ الْجَاهِلُوْنَ لِأَهْلِ الْعِلْمِ أَعْدَاءُ
আর মুর্খরাই ( জাহিলূন ) জ্ঞানীদের শত্রু।
٧. فَقُمْ بِعِلْمٍ وَ لَاتَبْغِيْ لَهُ بَدَلاً
অত:পর জ্ঞানের মাধ্যমে হও দণ্ডায়মান ও স্থিত ( কায়েম ) এবং করো না জ্ঞানের বিকল্প সন্ধান । ( অর্থাৎ জ্ঞানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত
হও । জ্ঞানের ভিত্তিতে নিজেকে পরিচালিত কর । তোমার যাবতীয় কর্মকাণ্ড যেন জ্ঞান ভিত্তিক হয় । আর জ্ঞানের বিকল্প কিছু নেই। তাই জ্ঞানের বিকল্প সন্ধান অনুচিত । ) 
 
فَالنَّاسُ مَوْتَىٰ وَ أَهْلُ الْعِلْمِ أَحْيَاءٌ 
 
আর জনগণ নিষ্প্রাণ , নির্জীব ও মৃত ( কারণ , তারা জ্ঞানের সন্ধান ও চর্চা করে না ) এবং জ্ঞানী গণ সবাই প্রাণবন্ত ও জীবিত ।
হযরত আমীরুল মু'মিনীন আলী ইবনে আবী তালিবের ( আ ) এই অমিয় বাণী ও কবিতা হোক আমাদের জন্য  আলোক বর্তিকা ।
অনুবাদ : ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

 

captcha